একজন জনৈক হুজুরের আলোচনা শুনলাম। তিনি বলছেন, সিরাতে মুস্তাকীম হচ্ছে জান্নাতের রাস্তা আর এই রাস্তার চাকা হচ্ছে ৩টিঃ

১নং চাকাঃ কওমী দেওবন্দী মাদ্রাসা।
২য় নং চাকাঃ বেদআত বিহীন খানকা।
৩য় নং চাকাঃ গাট্টিওয়ালার দল।

যে ব্যক্তি এই তিনচাকার গাড়ীতে উঠবে মরার পরেই সে ডাইরেক্ট জান্নাতে চলে যাবে। ভক্তরা বলে উঠলো, সুবহানাল্লাহ!

আসুন দেখি ৩ চাকার আলোচনা করি,

১নং চাকা কওমী দেওবন্দী মাদ্রাসা।

উক্ত তিনচাকার কথা কি কোরআন, হাদীসের কোথাও আছে? এখানে বিশেষভাবে কওমী দেওবন্দী মাদ্রাসার কথা বলে জাতিকে বিভক্ত করা হলো না? দেশেতো আরো মাদ্রাসা আছে, যেমন আলীয়া মাদ্রাসা, কিন্ডারগার্টেন মাদ্রাসা। তাহলে এসব মাদ্রাসায় লেখা-পড়া করলে কি জান্নাতে যাওয়া যাবে না? স্কুল কলেজে পড়েও যদি কেউ দ্বীনের উপর চলে তাহলে তারাও কি জান্নাতে যেতে পারবে না? জান্নাতে যাওয়া কি কওমী দেওবন্দী মাদ্রাসার উপর নির্ভরশীল, না-কি ঈমান আমলের উপর নির্ভরশীল?

২য় নং চাকা বিদআত বিহীন খানকা।

মানে হচ্ছে গিয়ে চরমোনাইয়ের খানকা। কোরআন হাদীসের কোথাও আছে চরমোনাইয়ের মুরীদ না হলে, তাদের খানকায় না গেলে জান্নাতে যাওয়া যাবে না? পীর না ধরলে জান্নাতে যাওয়া যাবে না?
বরং খানকা তৈরী করে ওরস করা, মান্নতের গরু কোরবানি করে ধনী গরীব মিলে মিশে সিন্নি খাওয়াটাইতো বড় বিদআত!

৩য় নং চাকা গাট্টিওয়ালার দল।

মানে হচ্ছে গিয়ে তাবলীগ জামাআত। কোরআন হাদীসের কোথাও আছে যে প্রচলিত তাবলীগ জামাআতের সাথে না থাকলে জান্নাতে যাওয়া যাবে না? প্রচলিত তাবলীগ জামাআতের সাথে গেলেই কি তাবলীগ করা হয় না-কি আরো বিভিন্নভাবে দাওয়াতের কাজ করা যায়? আর তাবলীগ জামাআতে গেলেই বা কার দলে যাবেন, সাদ সাহেবের তাবলীগে নাকি কওমী দেওবন্দীদের তাবলীগে? অথচ তারা উভয়ে উভয়কে গোমরাহ বলতেছে!

এভাবে সমাজের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরী করার কি দরকার?
এভাবে দ্বীন শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভাগ করার কি দরকার? এটাতো ইহুদী খ্রীষ্টানদের কথার মতো হয়ে গেলো না! যেমন কোরআনে এসেছে,

وَقَالُوۡا لَنۡ یَّدۡخُلَ الۡجَنَّۃَ اِلَّا مَنۡ کَانَ ہُوۡدًا اَوۡ نَصٰرٰی ؕ تِلۡکَ اَمَانِیُّہُمۡ ؕ قُلۡ ہَاتُوۡا بُرۡہَانَکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ

এবং তারা (ইয়াহুদী ও নাসারাগণ) বলে, জান্নাতে ইয়াহুদী ও নাসারাগণ ছাড়া অন্য কেউ কখনও প্রবেশ করবে না। এসব তাদের আকাঙ্ক্ষা মাত্র। আপনি তাদেরকে বলে দিন তােমরা যদি (তােমাদের এ দাবীতে) সত্যবাদী হও, তবে তােমাদের প্রমাণ পেশ কর।
(আল বাকারা-১১১)

তেমনিতো তারাও বলছে, কওমী দেওবন্দী, পীরের খানকা আর তাবলীগ জামাআতে গেলেই মৃত্যুর পরেই সোজা জান্নাত!

অথচ মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ

وَبَشِّرِ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ اَنَّ لَہُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ

যারা ঈমান আনয়ন করে ও সৎকর্ম করে তাদেরকে শুভ সংবাদ দাও যে, তাদের জন্যে আছে জান্নাত-যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত।
(আল বাকারা-২৫)

وَالَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ اُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ الۡجَنَّۃِ ۚ  ہُمۡ فِیۡہَا خٰلِدُوۡنَ 

যেসব লোক ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারা জান্নাতবাসী। তারা সর্বদা সেখানে থাকবে।
(আল বাকারা-৮২)

تِلۡکَ حُدُوۡدُ اللّٰہِ ؕ وَمَنۡ یُّطِعِ اللّٰہَ وَرَسُوۡلَہٗ یُدۡخِلۡہُ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَا ؕ وَذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ

এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে কেউ আল্লাহ ও রসূলের আদেশমত চলে, তিনি তাকে জান্নাত সমূহে প্রবেশ করাবেন, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হবে। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এ হল বিরাট সাফল্য।
(আন নিসা-১৩)

জানি উক্ত কথাগুলোর দ্বারা অনেকে মনে আঘাত পাবেন কিন্তু কিছু করার নেই হক কথা বলতেই হবে যদিও তা বাপ দাদার বিরুদ্ধে যায়। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হেদায়েতের পথে পরিচালিত করুন। আমীন